জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতিতে এবার দেরিতে শীতের আগমন ঘটলেও পৌষের শেশ থেকে জেঁকে বসেছে হাড় কাঁপানো শীত। মাঘের প্রথমাধ্যে হাড় কাপিয়ে দিচ্ছে শীত। সোমবার যশোরের তাপমাত্রা নেমেছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আবহাওয়া বার্তা বলছে, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, মাদারীপুর ও কিশোরগঞ্জ জেলা এবং রংপুর (৮ জেলা) ও রাজশাহী (৮ জেলা) বিভাগসহ মোট ২২টি জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পরে। এখন ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে বিভিন্ন জনপদ। কোনো কোনো এলাকায় কয়েকদিন ধরে বইছে কনকনে ঠান্ডা বাতাস। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল, অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষ।
খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। হতদরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও বস্তি এলাকার শীতার্ত মানুষের মাঝে সরকারি—বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র ও অন্যান্য সহায়তা প্রদানের ঐতিহ্য রয়েছে আমাদের। এবার দরিদ্রদের মাঝে যে ধরনের সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে তা অপ্রতুল।
শহরাঞ্চলের বাইরে গ্রামীণ এলাকায় শীতের তীব্রতা বেশি। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় কোনো কোনো এলাকার মানুষ অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে। তীব্র শীতের কারণে সারা দেশের নিম্নআয়ের মানুষকে খুব কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে।
উন্নত দেশগুলোতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় নানা রকম আগাম পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের দেশে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষের ঘরবাড়ি এতই নাজুক যে তা শীত ঠেকাতে পারে না। শীত নিবারণের সুযোগ ও সামর্থ্য যাদের কম, তারা কম শীতেও কাবু হয়ে পড়ে।
ছিন্নমূল মানুষের পক্ষে শীতবস্ত্র ও লেপ—কম্বল কিনে শীত নিবারণ করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে পুষ্টিহীনতার কারণে তাদের অনেকের রোগ—প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম। ফলে তারা শীতজনিত বিভিন্ন রোগে সহজেই আক্রান্ত হয়। শীত মৌসুমে কয়েক ধরনের ভাইরাস অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে।
এ অবস্থায় ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। সাধারণত শীতজনিত রোগে শিশু ও বয়োবৃদ্ধরাই আক্রান্ত হয় বেশি। এ সময় হাসপাতালগুলোতে এ বয়সের রোগীদের বেশি ভিড় লক্ষ করা যায়। এই সময়েই দরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র, খাদ্য ও ওষুধসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
শীতের শেষে শীতবস্ত্র বিতরণ ও শীতবস্ত্র বলতে শুধুই কম্বল বিতরণ করা একটা অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। মনে রাখা দরকার শুধু ঘুমানোর জন্য উষ্ণতা দরকার হয় না দিনের বেলা কাজের জন্য গরম কাপড় প্রয়োজন হয়। কম্বল গায়ে ঘুমানো যায় বটে কিন্তু গায়ে দিয়ে বাইরে বের হওয়া যায় না। আর শীত শেষে শীত বস্ত্র বিতরণ কোন কাজেই আসে না।
এবার শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে কম। আজকাল শহর—গ্রাম—গঞ্জের গরিব—দুঃখী মানুষের খোঁজখবর রাখার মতো মানুষের সংখ্যা কমে গেছে। একসময় শিক্ষার্থীদের মাঝে দুস্থদের জন্য ত্রাণ বিতরণের তাগিদ দেখা যেত।
এখন এ ধরনের মানবসেবামূলক কর্মকান্ডেও ভাটা পড়েছে। হাড় কাঁপানো শীতে দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ যাতে আর না বাড়ে, সেজন্য পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নিতে হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের উচিত অতীতের মতোই দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
শীতের ভোরে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক ও মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ এবং সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে দুর্ঘটনা এড়াতে যথাযথ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।