রায়হান সিদ্দিক : বর্তমানে ব্যস্ততম এই শহরে সব কিছু চলে ঘরির কাটা মেপে। সময়ের সাথে আমরা অবিরাম ছুটে চলেছি। কাজের ফাঁকে ক্ষণে ক্ষণে ঘড়ির কাটা কোনদিকে দৌড়াচ্ছে তা দেখে নেয়া অনেকের অভ্যাসেও পরিনত হয়েছে। মানুষের এ অভ্যাসের কথা চিন্তা করেই হয়তো ১৫৫০ সালে ক্লক ওয়াচ আবিষ্কার করেন পিটার হেনলেইন।
তবে তখন ঘড়িতে কোন কাটা ছিলো না। এরপর ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে সুইজারল্যান্ডে জোস্ট বার্গি মিনিটের কাটাসহ ঘড়ি আবিষ্কার করেন। তারপর থেকেই শুরু হয় আমাদের ঘড়ির কাটা ধরে ছুটে চলা।
স্বাভাবিক নিয়মে ঘড়ির কাটা ডান দিক দিয়ে উর্ধ্বমুখী ছুটে চলে, তবে যশোরে দেখে মিলেছে এক ভিন্ন জাতের ঘড়ি যার কাটা চলে উল্টো দিকে অথার্ৎ বামে। শুনতে অবাক লাগলেও এ উল্টো চলা ঘড়ি রয়েছে মণিহার সিনেমা হলের দেয়ালে।
প্রথম দেখায় যেকারও মনে হতে পারে ঘড়িটির নিছক মাথা খারাপ হয়েছে। তবে বিষয়টি মোটেও তা নই। এমন অদ্ভুত ঘড়ি তৈরি করেছেন মনিহার সিনেমা হলের চিপ অপারেটর শফিউজ্জামান মিন্টু। সেই ঘড়ি দেখে প্রায়শয়ই ভড়কে যান সিনেমাহলে আগত দর্শনার্থীরা।
কলেজপড়ুয়া মিনহাজ নিজের হাতের ঘড়ির সাথে দেয়ালে টাঙানো ঘড়ির কোন মিল না পেয়ে প্রথমে ভেবেছিলেন ঘড়িটি হয়তো নষ্ট। যদিও পরে জানতে পারেন এভাবেই ঘড়িটি তৈরি করা হয়েছে। তিনি জানান, সবসময় দেখেছি ঘড়ির কাটা ডান দিকে ছুটে চলে অথচ এই ঘড়িটি বাম দিক দিয়ে যাচ্ছে।
প্রথমে অদ্ভুত লেগেছিলো। ভেবেছিলাম ঘড়িটি নষ্ট কিন্তু পরে জানতে পারি এটা এভাবেই তৈরি।
আরও একজন দর্শনার্থী জানান, এটা নতুন অভিজ্ঞতা। প্রথম দেখাতে একটু ভড়কে গেয়েছিলাম, তবে উদ্ভাবনটা সত্যিই প্রশংসনীয়। এভাবেও যে সময় দেখা যায় এমনটা কখনো ভাবিনি।
ঘড়িটি ২০২১ সালে জুন মাসে তৈরি করেন শফিউজ্জামান মিন্টু। তিনি বলেন, ‘নতুন কিছু তৈরি করাই আমার নেশা। সেই নেশা থেকেই মূলত এমন ঘড়ি বানানো।
যখন প্রথম এমন ঘড়ি বানানোর কথা ভাবি তখন অনেকেই বলেছিলো এটা সম্ভব না, সেই জিদ থেকে আরও বেশি মনোযোগ দিয়ে এই ঘড়ি বানাতে চেষ্টা করি।’ তিনি জানান, এই ঘড়িটি বানানোর সময় সব থেকে বেশি বেগ পেতে হয়েছে উলটো কাটায় সময় ঠিক রাখা। যদিও পরে তার সমাধান হয়েছে।
আপাতত দুটি ঘড়ি তৈরি করে মনিহার সিনেমা হলের দেয়ালে টাঙানো হয়েছে। এমন আরও ঘড়ি বানানোর ইচ্ছা আছে বলেও জানান তিনি।
প্রতিদিনই মনিহার সিনেমা হলে সিনেমা দেখতে আসা দর্শনার্থীরা ঘড়িটি দেখতে ভিড় করেন। তবে উদ্ভাবক মিন্টু এর কোন বৈজ্ঞানিক কারণ না দেখাতে পারলেও তার দাবি দেশে এমন ঘড়ি আর কোথাও নেই।