নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর মেডিকেল কলেজের (যমেক) অধ্যক্ষ ও হিসাবরক্ষক অবসরে গিয়েও নিয়মিত অফিস করছেন। দায়িত্ব বুঝে না দিয়ে মন্ত্রণালয়ে মেয়াদ বাড়ানোর তদবির করছেন অধ্যক্ষ ডা. মহিদুর রহমান। আর বিধি অনুযায়ী কর্মচারীদের চাকরির বয়স শেষে মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ নেই। কিন্তু হিসাবরক্ষক জয়নাল আবেদীন দায়িত্ব বুঝে না দিয়ে চেয়ার আঁকড়ে বসে আছেন। এনিয়ে যশোর স্বাচিপ ও যশোর মেডিকেলে কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
যমেক সূত্র জানায়, অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মহিদুর রহমানের অবসর গ্রহণের দিন ছিল গত ৮ জুন। কিন্তু গত দুই সপ্তাহেও তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কারো কাছে দায়িত্ব দেননি। অবসরে যাওয়ার তিনদিন আগে চতুর্থ শ্রেণির ১৮টি পদে জনবল নিয়োগ সম্পন্ন করে যেতে চেয়েছিলেন। এজন্য ৪ জুন বিকালে পরীক্ষার আগের দিন অনলাইনে প্রবেশপত্র সবমিড করা হয়। লিখিত পরীক্ষা নেয়া হয় ৫ জুন। পরের দিন ৬ জুন মৌখিক পরীক্ষার দিন থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর বের হলে স্থগিত হয়ে যায় মৌখিক পরীক্ষা।
অভিযোগ উঠে কলেজের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর জুয়েল, হিসাবরক্ষক জয়নালসহ আরো দুই-একজন মিলে অধ্যক্ষকে প্রভাবিত করে নিয়োগ বাণিজ্য করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু জানাজানি হওয়ায় অধ্যক্ষ মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত করেন। এছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে তা বন্ধে ১১ জুন লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন অ্যাডভোকেট নব কুমার কুন্ডু। এতে নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত চক্র বিপাকে পড়ে যায়।
সূত্রের দাবি, ডা. মহিদুর রহমান অধ্যক্ষ থাকলে নিয়োগ বাণিজ্যে অসুবিধা হবে না। প্রার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া লাখ লাখ টাকাও ফেরত দেয়ার প্রয়োজন হবে না। এজন্য চক্রটি চায় অধ্যক্ষ হিসেবে ডা. মহিদুর রহমানের চাকরির মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধি হোক। সেই চেষ্টাও করে যাচ্ছেন ডা. মহিদুর রহমান। যদি সফল হন তাহলে আইনি প্রক্রিয়া মোকাবিলা করে তিনি ওই চক্রের পছন্দের লোকজনকে নিয়োগ দিয়ে যেতে পারবেন। যদিও তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করছেন, তার চেয়ারে থাকার সাথে নিয়োগ বাণিজ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে তিনি আরো দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টার কথা স্বীকার করেছেন।
এদিকে মেডিকেল কলেজ নিজস্ব ভবনে যাওয়ার পর একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। টেকনিশিয়ান না থাকলেও চার বছর আগে কিনে ফেলে রাখা হয় মরচুয়ারি ক্যাবিনেট যন্ত্র। এতে যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে যায়।
মেডিকেল কলেজের হিসাব শাখা থেকে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কলেজে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে মরচুয়ারি যন্ত্রটি কেনা হয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটা কাজে লাগানো যায়নি। এসব বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তদন্তে সত্যতা মিলেছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের নিরীক্ষা দলের তদন্তে বলা হয়েছে, যন্ত্রপাতি, আসবাব ও গ্রন্থাগারে বইপত্র কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে। অধ্যক্ষ, হিসাবরক্ষক, উচ্চমান সহকারীরা টাকা লুটপাট করেছেন। যে কারণে দুজন অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দীন ও আখতারুজ্জামান অবসরে গেলেও ছাড়পত্র দীর্ঘদিন আটকে ছিল। সম্প্রতি আখতারুজ্জামান ছাড়পত্র পেয়েছেন। কিন্তু গিয়াস উদ্দিনের ছাড়পত্র আটকেই রয়েছে।
অন্যদিকে, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হিসাবরক্ষক জয়নাল গত দুই মাস আগে অবসরে গেলেও এখনো সেই চেয়ারেই বসছেন। কারো কাছে হিসাব বুঝিয়ে দিচ্ছেন না।
এবিষয়ে অধ্যক্ষ ডা. মহিদুর রহমান বলেন, হিসাবরক্ষকে দায়িত্ব নেওয়ার মতো আপাতত কেউ নেই। এজন্য জয়নাল অনঅফিসিয়ালি হিসাবরক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।