নিজস্ব প্রতিবেদক, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : আগুনে দগ্ধ হয়ে ২২ দিন চিকিৎসার পর প্রাণ হারালেন প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক সুমা ব্যানার্জি (৩৫)। সুমার শরীরে ২২ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। গত ৩ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে ভাড়া বাড়ির সিঁড়ি ঘরে কৃষি ব্যাংক কালিগঞ্জ শাখার জেনারেটর ব্লাস্ট হয়ে আগুন ধরে যায় পাশে থাকা ভবন মালিকের গাড়ির টায়ার ও ভোজ্য তেলে। স্থানীয় ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীদের তৎপরতায় আগুন নেভানো সম্ভব হলেও সৃষ্ট কালো ধোঁয়া সিঁড়ি বরাবর উঠে যায় ভবনের চতুর্থ তলা অব্দি। ওই ভবনের ৪র্থ তলার ভাড়াটিয়া ছিলেন তিনি।
আটকে পড়া সোমা ব্যানার্জিকে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সহায়তায় উদ্ধার করে প্রথমে নেয়া হয় কালীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে যশোর সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন চিকিৎসকরা। ওই রাতেই তাকে নেয়া হয় ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে। সেখানে ভর্তি হয়ে ডাক্তার মৌসুমীর তত্ত্বাবধানে প্রায় তিন সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর তার শ্বাসনালী ও ফুসফুসের অবস্থা আরও বেশি খারাপ হওয়ায় ২৪ মার্চ সকাল ৭ টায় তাকে নেয়া হয় আইসিইউতে। ওই দিন রাত ১০ টার দিকে ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সোমবার সকালে তার মরদেহ কালীগঞ্জের কাষ্টভাঙ্গা গ্রামে সোমার শ্বশুরবাড়িতে আনা হয়। এবং কাষ্টভাঙ্গা মহাশ্মশানে তার শেষকীর্ত সম্পন্ন হয়। অবসরপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সূর্যকান্ত ব্যানার্জি এবং অবসরপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষক মাধুরা ব্যানার্জীর মেয়ে ছিলেন তিনি। তিনি কালীগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার স্বামী সুব্রত রায় চৌধুরী শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তাদের অষ্টম শ্রেণি পড়–য়া এক ছেলে ও অনুষ্কা রায় চৌধুরী নামে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়–য়া এক মেয়ে সন্তান রয়েছে।
এদিকে শিক্ষক পরিবারের সন্তানের এমন অকাল মৃত্যুতে আত্নীয়—স্বজন ও সহকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষি ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখা ও ভবন মালিকের অব্যবস্থাপনা ও উদাসীনতায়।একই ভবনে বাণিজ্যিক ও আবাসিক ব্যবস্থা থাকলেও ভবন মালিক অগ্নিনির্বাপণের কোন ব্যবস্থা রাখেননি। একই সাথে কৃষি ব্যাংক কালিগঞ্জ শাখার জেনারেটর স্থাপনে মানা হয়নি সঠিক নিয়মনীতি।
ভবনের মালিক মনোরঞ্জন সাহার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অসাবধানতার কারণে কৃষি ব্যাংকের জেনারেটর থেকে আগুন ধরে। এখানে আমার কোনো দায় নেই, সব দায় কৃষি ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখার।
কালীগঞ্জ উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার শেখ মামুন—উর—রশিদ জানান, অগ্নিকাণ্ডের দিন সিঁড়ি ঘরে জেনারেটর থেকে সৃষ্ট আগুন পাশে থাকা টায়ার ও ভোজ্য তেলে লেগে যায়। ভবন মালিক নিরাপত্তার জন্য অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন করেন নি। ফলে আগুন ধরে ধোয়া সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায় সহজেই।