শাহ জামাল শিশির, ঝিকরগাছা পৌর প্রতিনিধি : জন্ম থেকেই দুই হাত ও ডান পা নেই অদম্য মেধাবী তামান্নার। এভাবেই বা পা দিয়ে লিখে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয় তামান্না আক্তার নুরা। এরপর উচ্চ শিক্ষার জন্য স্নাতকে ভর্তি হলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি)। গত ২১ ডিসেম্বর যবিপ্রবির ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন তামান্না আক্তার নুরা। অদম্য মেধাবী এই তামান্নাকে অভিনন্দন জানিয়েছে ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর। সোমবার সমাজসেবা দিবসের অনুষ্ঠানে তাকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে অভিনন্দন জানায় ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর। তার হাতে ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার আলীপুর গ্রামের রওশন আলী ও খাদিজা পারভীন শিল্পীর মেয়ে তামান্না নুরা। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। জন্ম থেকেই তার দুই হাত ও এক পা নেই। শারীরিক এই প্রতিবন্ধকতা তার সাফল্যের পথে কখনো বাধা হতে পারেনি। বাঁ পা দিয়ে লিখেই তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেছিলেন। এরপর তামান্না যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এবিষয়ে তামান্না আক্তার নুরা জানান, তিনি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) মাইক্রোবায়োলজি বিষয়ে পড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় উপাচার্য স্যারের পরামর্শে ইংরেজিতে ভর্তি হন।
নিজের অনুভুতি জানাতে গিয়ে তামান্না বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ যশোর জেলা প্রশাসন, ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসনসহ সমাজের উচ্চ স্তরের মানুষ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে, আমাকে সাহস যুগিয়েছে। আমি তাদের ধন্যবাদ দিতে চাই। সত্য বলতে এখন আমার এখন মনে হয় না আমার হাত পা নেই। আমি চাই আমার মত হাজারো তামান্না এগিয়ে যাক। আমি সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাঁশে দাঁড়াতে চাই, তাদের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। ইতোমধ্যে আমি প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে কাজ করার জন্য একটি সমাজসেবামূলক সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়েছি’।
তামান্নাকে ক্রেস্ট দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল হক, ভাইস চেয়ারম্যান লুবনা তাক্ষী, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান, সরকারি শিশু সদন পরিবারের উপ-তত্ত¡াবধায়ক আব্দুল কাদের, সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহিদুল ইসলাম, উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্প কর্মকর্তা দুলাল পদ দেবনাথ, সহকারী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম, জেডিও নির্বাহী পরিচালক মনিরুজ্জামান মনিরসহ তামান্নার পিতামাতা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল হক বলেন, আমাদের যাদের চার হাত-পা আছে তারাই ঠিকমত দেশের সম্পদ হতে পারছি না। অথচ হাত-পা না থাকা অদম্য মেধাবী তামান্না নুরা নিজেকে দেশের সম্পদে পরিনত করেছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, তামান্না হলো আমাদের দেশের সম্পদ। সে নিজের যোগ্যতায় ও প্রচেষ্ঠায় অনেক এগিয়ে গেছে, ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যাবে।
অদম্য মেধাবী তামান্নার এইচএসসিসহ সকল পরীক্ষার সাফল্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ফোন করে খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তামান্নার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে আসেন তারা। তার চিকিৎসার জন্য ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানো হয়। সেখানে বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেনের তত্ত¡াবধানে তাকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করানো হয়।